G A S O N L I N E

Since 2003

#Gasonline

Home Discover Institutions Contact Us
Apply online Admission 2025 Online Fees Payment
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় - জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাতে বাংলা গদ্যভাষায় রূপের আবির্ভাব হয়েছিল এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় [১৮৩৮-৯৪] এর হাতে তাঁর যৌবনশ্রী ফুটে উঠেছিল। বঙ্কিম চন্দ্র একটি গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারের সদস্য ছিলেন এবং তিনি হুগলি কলেজ, প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেছিলেন, যার মধ্যে তিনি প্রথম স্নাতকদের একজন ছিলেন।  ১৮৫৮ থেকে, ১৮৯১ সালে তার অবসর গ্রহণ পর্যন্ত, তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম বিয়ে হয় ১৮৪৯ সালে। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ১১ বছর। নারায়নপুর গ্রামের এক পঞ্চমবর্ষীয়া বালিকার সাথে তার বিয়ে হয়। কিন্তু চাকুরি জীবনের শুরুতে যশোর অবস্থান কালে ১৮৫৯ সালে এ পত্নীর মৃত্যু হয়। অতঃপর ১৮৬০ সালের জুন মাসে হালি শহরের বিখ্যাত চৌধুরী বংশের কন্যা রাজলক্ষী দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

 বিদ্যাসাগরীয় গদ্যরীতি-ভিত্তিভূমির উপর গড়ে উঠলো বঙ্কিমী গদ্যরীতি। তাঁর প্রথম লক্ষ্য গদ্যের ভারসাম্য অর্জন, শেষ লক্ষ্য- সরলতা ও স্পষ্টতা অর্জন। দুয়ে মিলে বঙ্কিমী ভাষারীতির পূর্ণতা। প্রথম লক্ষ্যে বিদ্যাসাগর প্রায় উপনীত হয়েছিলেন। সেখান থেকে যাত্রা করে শেষ লক্ষ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপনীত হলেন শিল্পী-ব্যক্তিত্বের প্রয়োগে। দেখা গেল বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক স্টাইল, আসলে তা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর ব্যক্তিত্বের ভাষারূপ। শব্দ, ক্রিয়াপদ, বিশেষণ, অলংকার ও অনুচ্ছেদ ব্যবহারে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর নিজস্বতা তাঁর চল্লিশ বছরের সাহিত্য সাধনায় বিচিত্ররূপে প্রকাশিত হয়ে বাংলা গদ্যকে সমৃদ্ধি ও ঐশ্বর্য দিল।তিনি জীবিকাসূত্রে ব্রিটিশ রাজের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে কমলাকান্ত নামটি বেছে নিয়েছিলেন। তাঁকে বাংলা উপন‍্যাসের জনক বলা হয়।বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাসে ব্যবহার করলেন, তাকে বলা যায় বর্ণনাধর্মী স্টাইল। সেদিন এটাই উপন্যাসে প্রধান অবলম্বন ছিল, কারণ চরিত্রের মনোবিশ্লেষণ সে-কালীন উপন্যাসে দেখা দেয়নি। রূপ বর্ণনা, নাটকীয় আকস্মিকতা, কৌতুক সৃষ্টি, সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও অন্তরঙ্গ সম্ভাষণের সাহায্যে মনোবিশ্লেষণের দায়িত্ব নির্বাহ করতে হতো। ফলে বঙ্কিমী উপন্যাসে গতিবেগ, বর্ণাঢ্যতা ও নাটকীয়তা অনায়াসলক্ষণীয়। যথার্থভাবেই তিনি বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট হিসেবে পরিচিত।

 বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর ভাষারীতি অপরিবর্তনীয় নয়। প্রথম স্তরের (প্রাক-বঙ্গদর্শন যুগের) সংস্কৃতনির্ভর গদ্য অতিরিক্ত গুরুগাম্ভীর্য পরিহার করে দ্বিতীয় স্তরে (বঙ্গদর্শন যুগে) ক্রমশ সহজ সরল সাবলীল দেশি গদ্যে পরিবর্তিত হয়েছে। বিদ্যাসাগরী গদ্যরীতি থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর যাত্রা শুরু হয়। ‘দুর্গেশনন্দিনী, ‘কপালকুণ্ডলা, ‘মৃণালিনী, বিদ্যাসাগরী রীতিতে লিখিত। বঙ্গদর্শনের যুগের আরম্ভে ‘বিষবৃক্ষ উপন্যাসে বঙ্কিমের নিজস্ব রীতি আত্মপ্রতিষ্ঠ হয়েছে।

আনন্দ মঠ (১৮৮২), ‘দেবীচৌধুরাণী (১৮৮৩), ‘সীতারাম, ‘ইন্দিরা ও ‘রাজসিংহ’ উপন্যাসে বঙ্কিমের কথা-গদ্যের স্টাইল শিল্পসাফল্যের চরম শিখরে উন্নীত হয়েছে। শব্দ-সম্ভার, ক্রিয়াপদ, বিশেষণ, স্ত্রীপ্রত্যয় ও অর্থালঙ্কার ব্যবহার এবং অনুচ্ছেদ রচনায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর কৃতিত্ব তাঁর উপন্যাস থেকে আমরা বিচার করতে পারি। উপন্যাসে নায়িকারূপ বর্ণনা থেকে তাঁর গদ্যরীতির বিকাশ ও অগ্রগতি লক্ষ করা সম্ভব বলে মনে হয়। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস রচনার প্রেক্ষাপট আসলে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে। তৎকালীন সময়ের প্রথা ও সংস্কার আন্দোলন, হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থান, হিন্দু ধর্মের রক্ষণশীলতা, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবধারার সংঘাত, প্রগতিশীল ভাবধারার অভাব, সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার প্রাধান্য প্রভৃতি হল উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে আর্থসামাজিক পটভূমিকা এবং এই পটভূমিকাই বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস রচনার প্রেক্ষাপট।

বঙ্কিমচন্দ্র রচিত আনন্দমঠ (১৮৮২) উপন্যাসের কবিতা বন্দে মাতরম ১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক ভারতের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সুতরাং বলা যায় যে, গদ্যশিল্পী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কেবল ভাষাপথিক নয়, পথিকৃৎ। কথা-গদ্য ও প্রবন্ধ-গদ্যের বিচিত্ররূপ ও ঐশ্বর্য তাঁর নিপুণ লেখনীতে উৎসারিত হয়ে বাংলা গদ্যভাষাকে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে দিয়েছে। বিদ্যাসাগরের হাত থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে যে গদ্যভাষা তিনি পেয়েছিলেন, তাতে তিনি ব্যক্তিত্ব সঞ্চার করে প্রাঞ্জলতা দান করেছিলেন। এ কারণেই গদ্যশিল্পী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাঙালি ও বাংলা ভাষার চিরনমস্য।

পেশাগত জীবনেও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অত্যন্ত সফল ছিলেন । ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্‌টার পদে  কর্তব্যনিষ্ঠ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে দুটি খেতাবে ভূষিত করে - ১৮৯১ সালে রায় বাহাদুর খেতাব এবং ১৮৯৪ সালে কম্প্যানিয়ন অফ দ্য মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার খেতাব। তবুও সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নয়, বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক এবং বাংলার নবজাগরণের অন্যতম মুখ হিসেবে বাংলা ও বাঙালীর ইতিহাসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ।।

 আমরা গোপসাই অভিনন্দন সংঘ গ্রুপ অফ ইনস্টিটিউশন এর তরফে তাঁর জন্মদিনে তাঁকে আনত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি। আমরা বিশ্বাস করি বাংলা সাহিত্যে প্রায় ১৫০ বছর আগে বঙ্কিমচন্দ্র যে সাহিত্য সম্ভার রচনা করে গেছেন বঙ্কিমের পরেও বাংলা গদ্য সাহিত্যে লেখা হয়েছে তাতে বিষয়বস্তু ও আঙ্গিকের অনেক পরিবর্তন ঘটেছে।তবুও আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ক্ষেত্রেও বঙ্কিম রচনার প্রাসঙ্গিকতা ক্ষুন্ন হয়নি।। ইতিহাস, বিজ্ঞান,  রোমান্স, তত্ত্বকথা, দর্শন, সমাজ, রাজনীতি, সর্বোপরি দেশাত্মবোধ ভাবনা বর্তমান শিক্ষার অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলা গদ্য সাহিত্যে উষালগ্নে বঙ্কিমচন্দ্র তার প্রতিভার যে স্বাক্ষর রেখেছেন তা প্রশংসনীয় ।।

  

@প্রশান্ত কুমার রানা,

সহকারী অধ্যাপক, অনিন্দিতা কলেজ ফর টিচার এডুকেশন ।

 

Related Post

blog
National Anti Terrorism Day 2025 ...

May 21, 2025, dawns not as just another day in India’s calendar, neither it’s just another National Anti-Terrorism Day, but as a solemn reminder of the lives lost, the wounds borne, and the resilience shown in the face of terror. This National Anti-Terrorism Day comes barely a month after one of the most heinous terror attacks in recent memory, an act of cowardice that targeted innocent tourists in the tranquil valley of Pahalgam. Among the slain were families, newlyweds, and children; all victims of a calculated plan to spread fear and division by terrorists.

blog
The Light of Self Realization in Rabindra Manan A Small ...

জীবনভাবনা যদি দার্শনিকতা হয়, তবে তার জন্ম কীভাবে? মানুষের জীবনে যা কিছু ঘটে, যা কিছুর অস্তিত্ব আছে, তারই প্রসূত হলো জীবনভাবনা। এ জীবন জিজ্ঞাসা আমাদের মনকে বারবার  অনুরণিত করে। দার্শনিক শংকরাচার্যের মতে এ মানুষের নয় পশুর প্রবৃত্তি। যা ত্যাগ করতে পারলে ব্রক্ষের উপলব্ধি হবে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের দার্শনিকতা জীবনকে অস্বীকার করে নয়। প্রবৃত্তি পশুদের ও মানবসমাজে উভয়েই প্রযোজ্য। কিন্তু মানুষ প্রেমে, ত্যাগে মহৎ হয়ে উঠতে পারে। রবীন্দ্রনাথের এই জীবনভাবনাই দার্শনিকতাকে নবরূপ দান করেছে।

Leave a Comment