G A S O N L I N E

Since 2003

#Gasonline

Home Discover Institutions Contact Us
Apply online Admission 2025 Online Fees Payment
বিদ্যাসাগর ~ অতীতের আলোকবর্তিকা, ভবিষ্যতের দিকদর্শন

সময়ের সঙ্গে সমাজ বদলায়, প্রযুক্তি এগোয়, চিন্তাধারার রূপান্তর ঘটে। তবুও কিছু মানুষ, কিছু মূল্যবোধ চিরকাল সময়ের “সীমার মাঝেও অসীম”…...... কালের গন্ডি তাঁদের বাঁধতে পারে না । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সেই বিরল মানুষদের একজন যাঁকে আমরা ইতিহাসের পাতায় রেখে এলেও, সমাজ এখনো তাঁর আদর্শের সন্ধানে পথ খোঁজে।

আজ, তাঁর প্রয়াণ দিবসে, শুধু তাঁকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করলেই চলবে না, উপলব্ধি করতে হবে তাঁর প্রয়োজনীয়তা, যাঁর চিন্তা, যাঁর কাজ , শত বছর পরেও সমান প্রাসঙ্গিক I

একটি সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন নির্ভর করে তার শিক্ষাব্যবস্থা, নৈতিকতাবোধ এবং সামাজিক  সাম্যের উপর। বিদ্যাসাগর এই তিনটির জন্যেই আমৃত্যু লড়াই করেছেন  এবং তা করেছেন নির্ভীকভাবে। তিনি যে সময়ের কথা বলেছিলেন, যে সংস্কারের জন্য লড়েছিলেন, তা আজও বহু ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে অধরাই রয়ে গেছে।

আজ যখন নারীশিক্ষা, বৈবাহিক স্বাধীনতা, সামাজিক সহনশীলতা, এমনকি বয়স্কদের মর্যাদা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে, তখন পণ্ডিত বিদ্যাসাগর  নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন।

 শিক্ষা মানে কেবল ডিগ্রি নয়, চরিত্র গঠন :

বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন প্রকৃত মানবতাবাদী, একজন প্রকৃত শিক্ষাবিদ তিনি শুধুই বিদ্যা অর্জনের বিশ্বাস রাখতেন না, তিনি বিশ্বাস করতেন "শিক্ষা মানেই ন্যায়বোধ, সহানুভূতি ও নৈতিক শক্তির বিকাশ"। শিক্ষা মানে চিন্তাশক্তি, মনুষ্যত্ব এবং অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর সাহস।

আজ, যখন শিক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে শুধুই প্রতিযোগিতার হাতিয়ার, যখন মূল্যবোধের জায়গায় স্থান পেয়েছে নম্বর ও সাফল্যের মাপকাঠি , তখন আমাদের  পণ্ডিত বিদ্যাসাগরের চিন্তার কাছে ফিরে যাওয়া আশু জরুরি।

 নারীর প্রতি সম্মান: কাগজে নয়, সমাজে :

ঈশ্বর চন্দ্র বন্দোপাধ্যায়  বিধবাবিবাহের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন তখন, যখন গোটা সমাজ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে দন্ডায়মান । নারীর শিক্ষার জন্য তিনি যুদ্ধ করেছিলেন কলমে, কর্মে ও সাহসে। আজ, ২০২৫ সালে এসেও, যদি কোনও কন্যাশিশু এখনও অনেক জায়গায় স্কুলে যেতে পারে না, বা একজন, কন্যা শিশু থেকে নারী শুধুমাত্র তার লিঙ্গ পরিচয়ের কারণ সমাজে অসম্মান, অবহেলা, শারীরিক নিগ্রহের শিকার হন, তবে প্রশ্ন ওঠে : "আমরা সত্যিই বিদ্যাসাগরের স্বপ্নের সমাজ গড়তে পেরেছি কি?"

মানবতার জন্য সত্যিকারের কাজ নিঃশব্দে হয়, বিজ্ঞাপনে নয় :

বিদ্যাসাগর শুধু সমাজসংস্কারক ছিলেন না, ছিলেন এক অসামান্য মানবপ্রেমিক। দরিদ্র, নিপীড়িত, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো তাঁর জীবনের স্বাভাবিক কাজ ছিল। তিনি দান করতেন নিঃস্বার্থভাবে, লড়তেন ন্যায়ের জন্য নির্বিরোধভাবে।

আজ, এই আত্মকেন্দ্রিকতার সময়ে,  যখন প্রান্তিক মানুষ আজও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, সমাজে বিভাজন, বিদ্বেষ, এবং অসহিষ্ণুতা ক্রমশ বাড়ছে, যখন  দায়িত্ব অনেক সময়েই ব্যক্তিগত লাভের বাইরে যায় না,সেখানে বিদ্যাসাগরের নিঃস্বার্থতা আমাদের শিক্ষা দেয় -

"মানবতার জন্য সত্যিকারের কাজ নিঃশব্দে হয়, বিজ্ঞাপনে নয়।"

বিদ্যাসাগরকে ইতিহাসে নয়, জীবনে ফিরিয়ে আনা দরকার: 

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শুধু একটি নাম নয়, তিনি এক আদর্শ, এক দর্শন - যাঁকে বর্তমান সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগর কে স্মরণ করা বা সম্মান জানানো মানে তাঁর মূর্তি স্থাপন, রাস্তার বা বিদ্যালয়ের নামকরণ  বা তাঁর মূর্তিতে মাল্যদান করা নয়। তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো মানে তাঁর  চিন্তা কে মননে ধারণ করা; তাঁর সাহসিকতায় চরিত্র গঠন করা; তাঁর আদর্শে জীবন যাপন করা।

বর্তমান সময়ে যখন অবিশ্বাস, ভেদাভেদ, হানাহানি, হিংসায় সমাজ উন্মত্ত, উত্তাল, তখন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দেখানো পথ ই ফিরিয়ে আনতে পারে হারিয়ে যাওয়া ভরসা, বিশ্বাস, মনুষ্যত্ব ।

তাই আঁধার শেষে আলো খোঁজা আমরা বিশ্বাস করি বিদ্যাসাগর আজও বেঁচে আছেন প্রতি টি সাহসী সামাজিক পদক্ষেপে, প্রতিটি শিশুর  প্রথম বর্ণের পরিচয়ে, প্রতিটি নারীর স্বাধিকার রক্ষার দৃঢ় চেতনায়, প্রতিটি প্রান্তিক মানুষের অধিকার রক্ষার প্রচেষ্টায়, প্রতিটি কন্যা শিশু'র সামাজিক সম্মান রক্ষার অবিচল অঙ্গীকারে ।

গোপসাই অভিনন্দন সংঘ গ্রুপ অফ ইনস্টিটিউশন্স এর প্রতিটি সদস্য আজ আমাদের ভূমিপুত্র পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবসে তাঁকে আভূমি প্রণতি জানাই।

সঞ্চিতা রায়চৌধুরী

Related Post

blog
Midnapore Where Freedom Forged its Fire ...

When India’s independence story is told, Delhi’s political negotiations and Calcutta’s big rallies dominate the script. Yet far from the spotlight, Midnapore, now Purba and Paschim was a place where freedom was not a slogan but a lived dangerous commitment. Here, in dusty village lanes and small-town hideouts, people fought in ways that history books found too raw to celebrate.

Midnapore’s struggle was uncompromising. British reports called it “one of the most violent districts” due to political assassinations, sabotage, and underground networks. Colonial accounts painted the rebels as “terrorists,” while post-independence narratives leaned heavily on the Gandhian path, leaving these fighters unmentioned or misrepresented.

blog
PAHAR PUJO A UNIQUE EXPRESSION OF NATURE WORSHIP AND INDIGENIOUS ...

জঙ্গলমহল - বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল - প্রাচীনকাল থেকেই এক অনন্য সংস্কৃতি, লোকবিশ্বাস ও প্রকৃতি -পূজার পীঠস্থান। এখানকার অজস্র পাহাড়, জঙ্গল, নদী আর লাল মাটির বুক জুড়ে গড়ে উঠেছে হাজারো বছরের আদিবাসী আচার-অনুষ্ঠান। তারই একটি গভীর অথচ আজ প্রায় বিস্মৃত প্রথা হলো পাহাড় পূজাপাহাড় পূজা এক আচার, যা কোনও ধর্মগ্রন্থে লেখা নেই, তবু শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এখানকার মানুষ মন প্রাণ ঢেলে পালন করে আসছে।

Leave a Comment